শুরুতে ঝড় তুললেন সৌম্য সরকার। চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে তুলে নিলেন ফিফটি। পরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর শামীম পাটোয়ারীর ঝড়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে রেকর্ড-গড়া জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে এত রান তাড়া করে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জেতেনি টাইগাররা।
প্রায় ৮ বছর পর পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে এবার জিম্বাবুয়ে যায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। শেষবার যখন জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়েছিল টাইগাররা, তখন অর্জনের থেকে বিসর্জনের পাল্লাই ছিল ভারী। এবার আক্ষেপ কিছুটা ঘুচল। মিলল অনেক হিসাব। টেস্ট, ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজও নিজেদের দখলে নিলো লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সব ফরম্যাট মিলে সফরে মোট ৭ ম্যাচের ছয়টিতেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বিদেশের মাটিতে তিন ফরম্যাটেই এমন সাফল্যও এসেছে অনেকদিন পর।
হারারের স্পোর্টস ক্লাব মাঠে আজ (রোববার) আগে ব্যাট করে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের সামনে ১৯৪ রানের বিশাল টার্গেট দেয় স্বাগতিকরা। এর আগে একবারই এত বড় লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ছিল বাংলাদেশের। ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২১৫ রানের টার্গেট টপকে ৫ উইকেট জিতেছিল টাইগাররা। রান তাড়া করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। ১৬৪ রান টপকে জিতেছিল ২০১৬ সালে, খুলনায়। এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সে রেকর্ড পেরিয়ে নতুন রেকর্ড করল বাংলাদেশ।
সফরের শুরুটা জয় দিয়েই হয়েছিল বাংলাদেশের। একমাত্র টেস্টে ব্রেন্ডন টেলরের দলকে ২২০ রানের বড় ব্যবধানে হারায় মুমিনুল হকের দল। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও এক তরফা জয় পায় সফরকারীরা। ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে হোয়াইট ওয়াশ করে জিম্বাবুয়েকে। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরুটাও হয়েছিল জয় দিয়ে। তবে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে হারে ২৩ রানে।
আজ ৩য় টি-টোয়েন্টি তাই হয়ে গিয়েছিল অলিখিত ফাইনাল। ১৯৪ রানের বিশাল লক্ষ্য টপকে ৪ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ দল। এতে ম্যাচ জয়ের পাশাপাশি টেস্ট, ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজও নিজেদের করে নিলো সফরকারীরা।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে অবশ্য শুরুটা সুখকর হয়নি বাংলাদেশের। ওপেনার নাঈম শেখ আউট হন ৩ রান করে। সাকিবকে নিয়ে রান তোলার গতি ধরে রাখেন সৌম্য সরকার। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনের পঞ্চাশ রানের পার্টনারশিপে ম্যাচ বাঁচিয়ে রাখে বাংলাদেশ। সাকিব অবশ্য ইনিংস বড় করতে পারেননি, ফেরেন ১৩ বলে ২৫ রান করে।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় সৌম্য সরকারের ব্যাটিংটাই কেবল স্বস্তি দিচ্ছিল। ৪০ বলে তার ব্যক্তিগত অর্ধশতক ম্যাচে রেখেছিল বাংলাদেশকে। পরে ৪৯ বলে ৯টি চার ও ১টি ছয়ের মারে ৬৮ রান করে আউট হন তিনি। ম্যাচ জয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (২৮ বলে ৩৪) আফিফ হোসেন (৫ বলে ১৪) ও শামীম পাটোয়ারী।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলা শামীম ব্যাট হাতে রীতিমত ঝড় তোলেন। খেলেন ১৫ বলে অপরাজিত ৩১ রানের ইনিংস। এতে ৪ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখে জয় পায় বাংলাদেশ দল।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের ইঙ্গিত দেয় স্বাগতিকরা। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বাংলাদেশি পেসার তাসকিন আহমেদের ওপর চড়াও হন জিম্বাবুইয়ান ওপেনার মেধেভেরে। তাকে যেন বল ফেলার জায়গা পাচ্ছিলেন না তাসকিন। সে ওভারে একে একে তাসকিন হজম করলেন ৫টি চার!
ইনিংসের ৪ ওভার ২ বলেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে দলীয় স্কোর ৫০ ছাড়ায় জিম্বাবুয়ে। পাওয়ার প্লের শেষ বলে বাংলাদেশকে খানিক স্বস্তি দিয়ে প্রথম উইকেট এনে দেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ২০ বলে ২৭ রানে ফেরেন মারুমানি। এরপর মেধেভেরের সঙ্গে যোগ দেন চাকাভা। বাংলাদেশি বোলারদের শাসন করে ইনিংসের ১০ ওভারেই দলীয় শতরানের কোটা ছুঁয়ে ফেলে স্বাগতিকরা।
ইনিংসের ১১তম ওভারে একাদশে সুযোগ পাওয়া বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে হাওয়ায় ভাসিয়ে পরপর তিন বল সীমানার বাইরে পাঠিয়ে সে ওভার থেকে চাকাভা তুলে নেন ২১ রান। এরপর মাত্র ৩১ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরির তুলে নেন মাধেভেরে। আগের ম্যাচেও ফিফটির স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি। আজ অর্ধশতক হাঁকিয়ে সাজঘরে ফেরেন ৫৪ রান করে। ৩৬ বলের ইনিংসটি সাজান ৬টি চারের মারে।
তার আগেই অবশ্য ৪৮ রান করে আউট হন চাকাভা। ২২ বলের বিধ্বংসী ইনিংসটি সাজান ৬টি ছয়ের সাহায্যে। শেষদিকে ডিওন মেয়ার্সের ২৩ রানের সঙ্গে রায়ান বার্লের ১৫ বলে অপরাজিত ১৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসের কল্যাণে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৯৩ রান। বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ১৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন সৌম্য সরকার।